মানুষের প্রথম শত্রু কে ছিল? কোন প্রাণী প্রথম মানুষ শিকার করে?


আজ পৃথিবীতে মানুষই সেরা। বাঘ, সিংহও মানুষকে ভয় পায়। কিন্তু সব সময় এমন ছিল না। এক সময় ছিল যখন মানুষ নিজেই ছিল শিকার। আমাদের পুরনো পূর্বপুরুষরা ছিলেন দুর্বল। তাঁরা ভয়ংকর প্রাণীদের থেকে পালিয়ে বেড়াতেন।


তখন মনে প্রশ্ন আসেই, কোন প্রাণী প্রথম মানুষ শিকার করেছিল? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। কারণ এটা লক্ষ লক্ষ বছর আগের কথা। তবে পুরনো হাড় পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা কিছু ধারণা পেয়েছেন। চলুন, সেই গল্পটাই আজ জানি।

যখন মানুষ ছিল শিকার


অনেক অনেক দিন আগের কথা। আফ্রিকায় আমাদের পূর্বপুরুষরা থাকত। তাদের নাম ছিল হোমিনিড। তারা দুটি পায়ে হাঁটতে পারত। কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক ছিল ছোট আর শরীর ছিল দুর্বল। নিজেদের বাঁচানোর জন্য ভালো হাতিয়ারও ছিল না। তারা ফল, পোকা আর ছোট প্রাণী খেত।

সেই সময় পৃথিবীতে বিশাল ও ভয়ংকর সব প্রাণী ছিল। তাদের মধ্যে আমাদের পূর্বপুরুষদের টিকে থাকাটা ছিল খুব কঠিন।

প্রধান সন্দেহভাজন: কারা ছিল সেই প্রথম শিকারী?


বিজ্ঞানীরা কয়েকটা প্রাণীকে সন্দেহ করেন।


১. বড় বিড়াল


পুরনো দিনের বিড়ালরা ছিল খুব ভয়ংকর। যেমন, স্যাবার-টুথ ক্যাট। এদের ছিল ছুরির মতো বড় ও ধারালো দাঁত। তারা বড় প্রাণীর গলা বা পেট চিরে ফেলত। আমাদের পূর্বপুরুষদের জন্য তারা ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। এছাড়া ছিল গুহা সিংহ, যা আজকের সিংহের চেয়েও বড় ও শক্তিশালী ছিল।


  • প্রমাণ: পুরনো দিনের মানুষের হাড়ে বিড়ালের দাঁতের দাগ পাওয়া গেছে।


২. ভয়ংকর হায়েনা


আজকের হায়েনারা মরা প্রাণী খায়। কিন্তু আগের হায়েনারা ছিল শক্তিশালী শিকারী। তাদের এক প্রজাতির নাম ছিল ‘দৈত্য হায়েনা’। এরা ছিল সিংহের মতো বড় ও শক্তিশালী। তাদের চোয়াল দিয়ে সহজেই হাড় গুঁড়ো করে ফেলত।


  • প্রমাণ: হায়েনার গুহায় মানুষের পুরনো হাড় পাওয়া গেছে। হাড়ে হায়েনার দাঁতের দাগও ছিল।


৩. কুমির ও সাপ


আমাদের পূর্বপুরুষরা জলের কাছে যেত। কিন্তু সেখানেও বিপদ ছিল। তখন অনেক বড় বড় কুমির থাকত। তারা জলের জন্য আসা মানুষকে শিকার করত। তানজানিয়ায় এক ধরনের ‘মানুষ-খেকো কুমির’-এর হাড়ও পাওয়া গেছে। এছাড়া বড় সাপও গাছের ডালে লুকিয়ে থাকত।

সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ: আকাশের শিকারী


  • সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণটি আসে আকাশ থেকে। ১৯২৪ সালে বিজ্ঞানীরা একটি শিশুর মাথার খুলি খুঁজে পান। এর নাম দেওয়া হয় ‘টাউং শিশু’। এটি ছিল প্রায় ২৫ লক্ষ বছর আগের।


  • প্রথমে বিজ্ঞানীরা বোঝেননি শিশুটি কীভাবে মারা গেছে। খুলিতে ছোট ছোট কিছু দাগ ছিল। অনেক বছর পর আসল সত্যিটা জানা গেল। বিজ্ঞানীরা দেখেন, আফ্রিকার এক ধরনের বড় ঈগল বানর শিকার করে। 


  • তারা যেভাবে বানরের চোখে নখ দিয়ে আঘাত করে, ঠিক সেই রকম দাগই ছিল টাউং শিশু-র খুলিতে!


  • এতেই প্রমাণ হয়, একটি বিশাল ঈগল শিশুটিকে আকাশ থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে গিয়েছিল। 


  • এটাই আমাদের হাতে থাকা সবচেয়ে পাকা প্রমাণ। তাই বলা যায়, একটি বিশাল শিকারী ঈগলই সম্ভবত প্রথম প্রাণী, যার মানুষ শিকার করার স্পষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।

ডাইনোসর কি মানুষ শিকার করত? একটি ভুল ধারণা


অনেকেই ভাবে, পুরনো মানুষ ডাইনোসরের সাথে লড়ত। এটা একদম ভুল। ডাইনোসররা শেষ হয়ে গিয়েছিল সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে। আর মানুষের আসা শুরু হয় তার অনেক পরে। তাই তাদের দেখা হওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না।

কীভাবে মানুষ সেরা শিকারী হলো?


তাহলে দুর্বল মানুষ কীভাবে এত শক্তিশালী হলো? এর কয়েকটি কারণ আছে।


১. বড় মস্তিষ্ক: মানুষের মাথা বড় হতে লাগল। তারা বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করতে শিখল।
২. হাতিয়ার: তারা পাথর দিয়ে হাতিয়ার বানাল। বর্শা দিয়ে শিকার করত ও নিজেদের বাঁচাত।
৩. আগুন: আগুন ছিল সবচেয়ে বড় শক্তি। আগুন জ্বালিয়ে তারা ভয়ংকর প্রাণীদের দূরে রাখত।
৪. দলবদ্ধ জীবন: তারা একা না থেকে দলে থাকত। দল মিলে তারা বড় প্রাণীদেরও হারিয়ে দিত।

এইভাবেই মানুষ ধীরে ধীরে শিকার থেকে শিকারী হয়ে ওঠে।

শেষ কথা


আমরা হয়তো কোনোদিন জানতে পারব না, ঠিক কোন প্রাণী প্রথম মানুষ খেয়েছিল। সেটা বাঘ, হায়েনা বা কুমির হতে পারে। কিন্তু ‘টাউং শিশু’-র গল্প আমাদের দেখায় যে, একটি বিশাল ঈগল আমাদের পূর্বপুরুষকে শিকার করেছিল।

আমাদের পূর্বপুরুষদের সেই লড়াইয়ের জন্যই আজ আমরা টিকে আছি। তাদের ভয় আর সাহসই আমাদের আজকের মানুষ বানিয়েছে। এই ইতিহাস আমাদের টিকে থাকার অসাধারণ ক্ষমতার কথাই বলে।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url